আর্কাইভ | সচেতনতা RSS for this section

আছাড়

অফিসের সময় হয়ে এসেছে। জাঁদরেল স্ত্রী নাস্তা তৈরিতে ব্যাস্ত। স্ত্রী ভয়ে সদাসন্ত্রস্ত স্বামী অফিসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোন মতে নাস্তা সেরে বের হতে পারলেই তার প্রশান্তি। স্ত্রী ফ্রাই প্যানে বেগুন দিতেই ছ্যাত করে শব্দ, আর তখনই তার কানে এলো ধপাস করে কিছু পড়ার শব্দ। চিৎকার করে বলল, -এই, এত শব্দ কিসের, কী পড়লো? -আমার জামাটা হঠাৎ করে পড়ে গেছে। ঘর থেকে স্বামীর উত্তর। -জামা পড়লে অত জোরে শব্দ হয় নাকি? -জামার মধ্যে আমিও ছিলাম যে! অসংখ্যবার কথিত ও শ্রুত এ কৌতুক আপনার হাসির কারণ হবে না জেনেও অমূল্য খাদ্য বিষয়ক আজকের এ পোস্টের ভূমিকা হিসেবে লিখলাম। আচ্ছা, এবারে একটা ধাঁধাঃ ছোট লোকে খাইলে কাঁদিয়া ভাসায়, বড় লোকে খাইলে এদিক ওদিক চায়।

[এখানে ‘ছোট’ আর ‘বড়’ শব্দ দু’টো বয়স বুঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে।]

আমি জানি, এটার উত্তর আপনাদের সকলেরই জানা আছে। এ ধাঁধার উত্তরটি আজকের এই পোস্টের শিরোনাম, তাই এটা উল্লেখ না করে পারলাম না।

বর্ষাকালে কর্দমাক্ত পথে হাটতে বা শুকনার দিনে কলার খোসায় পা পিছলে আছাড় খাওয়া তেমন অস্বাভাবিক কিছু নয়। কম বয়েসীদের জন্য বেশিরভাগ সময় আছাড় তেমন কোন গুরুত্ব বহন করেনা, বয়স্কদের বেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আছাড় অমূল্য(!) হয়ে ওঠে। রাস্তায় চলতে কাদা বা কলার খোসা বিষয়ে মোটামুটি সবাই সাবধান/সতর্ক থাকে, কিন্তু বাড়ির বাথরুমে অতিরিক্ত সতর্কতা নিয়ে কারোরই তেমন মাথা ঘামাতে দেখা যায়না। বিপত্তি ঘটে এখানেই, আর তা ঘটেও বাড়ির বেশি বয়সের সদস্যদের বেলাতেই। ফলে, এ অমূল্য আছাড় খেয়ে কারো হাত, কারো পা ভাঙে, বেশি মূল্যবান হয়ে ওঠে স্ট্রোক হয়ে গেলে। বাথরুমে কাদা থাকে না, থাকে না কলার খোসা, এমন কি ডাইনিং টেবিলও থাকেনা! তবে কেন এখানে আছাড় খাওয়া? ভাগ্যের পরিহাস, নাকি নিতান্তই দুর্ভাগ্য?

আসুন, আমরা দেখতে চেষ্টা করি, কেন বাথরুমে অনেকেই আছাড় খেয়ে পড়ে হাত পা ভাঙে বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মত জীবননাশী আঘাতের শিকার হয়? বাথরুমের মেঝে প্রায় সব সময়ই ভেজা স্যাতস্যাতে থাকে। কাপড়কাচা বা গোসলের সময় সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়। পানি ঢেলে ধুলেও এ সাবানের কিছুটা মেঝেতে লেগেই থাকে। একেতো ভেজা মেঝে, তার ওপরে সাবানের স্তর, পিছলাতে সুবিধা তো হয়ই কিছুটা। অধিকাংশ সময়ই বাথরুমের দরজা বন্ধ করে রাখা হয়, জানালাও হয় অতি ক্ষুদ্র আকারের, ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা অতিশয় করুণ! এমন ক্ষেত্রে শুকনো মেঝে কল্পনা করা যায় না।

খালি পায়ে বাথরুমে না যাবার জন্য স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিবর্গ, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকগণ সকলকে পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। কিন্তু সেখানে কেমন পাদুকা ব্যবহার করা উচিৎ সে বিষয়ে কেউ কোনভাবে সতর্ক করেন বলে জানা যায় না। বহু ব্যবহৃত তলা ক্ষয়ে যাওয়া চপ্পল হচ্ছে বাথরুম স্লিপার। এই স্লিপার পায়ে বাথরুমে ঢুকে কেউ যদি স্লিপ করে না পড়েন তা নিতান্তই দুর্ভাগ্যের পরিহাস।

পানিবিহীন বাথরুম অকল্পনীয়, আর তাই বাথরুম আর পানি প্রায় সমার্থক। আসলেও তো, পানি ছাড়া বাথরুম হতেই পারে না। আর যেখানে পানি আছে, সে জায়গা ভেজা বা স্যাতসেতে থাকা, এমন কী ছ্যাতলা (শেওলা) পড়া মোটেও অস্বাভাবিক কোন ব্যাপার নয়। আর এমন মেঝের অর্থই হচ্ছে অনর্থের দরজায় কড়া নাড়া। আছাড়ের মত উপাদেয় খাদ্যের যাবতীয় উপাদান সেখানে মজুদ থাকে নির্বিবাদে এবং পরিমানে বৃদ্ধি পেতে থাকে অকাতরে দিনের পর দিন। ইচ্ছা থাক বা না-থাক এই পুষ্টিকর খাদ্যটি গ্রহণের সম্ভাবনা বেড়েই চলে আমাদের অজান্তে; এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও হয়তো এক সময় তা গলাধঃকরণ করতে হয়।

করণীয় কী? আছাড় না খেয়ে সুস্থ থাকবার পথ বাৎলাতে সকলের মনোযোগ ও পরামর্শ, সহযোগিতা ও আন্তরিকতা বড় ধরনের সহায়ক হতে পারে। আপাততঃ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরকার বাথরুমের মেঝে শুকনা রাখা, পানির আধিপত্যের আধিক্যে যা প্রায় অসম্ভব। তবুও চেষ্টা করতে দোষ কী? পানি নিষ্কাশন ও আলোবাতাসের অবাধ যাতায়াতের ব্যাবস্থা রাখা ছাড়াও ব্যবহারের পরপরই নিজেই যথাসম্ভব জমে থাকা পানি সরিয়ে দিতে হবে।

সাধারনত বাথরুমের দরজা সবসময় বন্ধ করে রাখা হয়, এতে বায়ু চলাচল বিঘ্নিত হয়, মেঝে শুকাতে দেরি হয়, গন্ধ আটকে থেকে ভ্যাপসা অসহনীয় গুমোট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, ফলে বাথরুমে ঢুকেই একটা বড় ধাক্কা খেতে হয় প্রায় সকলকেই। অতএব ব্যবহারের পর বাথরুমের দরজা আটকে রেখে বাথরুমকে দূষিত না করার জন্য একটুখানি ভেবে দেখতে পারি সকলেই। চপ্পল বা স্লিপার পরে বাথরুমে কেন যেতে হবে এ বিষয়ে আমি তেমন কোন যুক্তি খুঁজে পাই না। শরীরের সব ময়লা-নোংরা থেকে মুক্তি লাভ হয় যেখানটাতে, সেখানে তো কোন ময়লা থাকবার কথা নয়। আর যদি ময়লা থাকেই সেখানে, তা’হলে সেখান থেকে ময়লামুক্ত হয় কেমন করে? ময়লা ও নোংরা পানিতে বিদেশি দামী সাবান দিয়েই গোসল করলেও লাভ হবে না কিছুই! সুতরাং বাথরুমকে আগে ময়লামুক্ত, জীবানুবিহীন নিরাপদ করে তুলতে হবে, বেডরুমের চেয়ে পরিচ্ছন্ন বাথরুমে স্লিপার পায়ে ঢুকবার প্রয়োজন কী? আর যদি এ অভ্যাস ছাড়তে না-ই পারেন, তা’হলে পুরাতন তলা ক্ষয়ে যাওয়া স্লিপার জোড়া ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসুন; নতুন একজোড়া ভালো জাতের স্লিপার বাথরুমে ব্যাবহার করুন।

এবারে একটা ছোট্ট অনুরোধঃ বাথরুম নিজে পরিস্কার করুন, বাড়ির সকল সদস্যকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করুন, কাজের মানুষের উপরে এ দায়িত্বটি ছেড়ে দিয়ে নিজের/নিজেদের বিপদ ডেকে আনবেন না।

প্রাসঙ্গিক হলেও এখানে অপ্রয়োজনীয় কয়টা কথাঃ   আমরা যারা ভাড়া বাড়িতে থাকি, বা ইতিমধ্যে নিজের বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছি, তাদের সুবিধা-অসুবিধা তারা ভোগ করছি। যারা এখনও অপেক্ষা করছেন নিজ গৃহ নির্মানের, তাদের জন্য বাথরুম নিয়ে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ আছে। বর্গাকৃতি বা প্রায় বর্গাকৃতি বাথরুমের অভ্যন্তরীণ সজ্জা তেমন সুবিধাজনক হয় না। এটা যদি হয় প্রস্থের চেয়ে আড়াই গুণ দৈর্ঘের, তবে প্রবেশপথের কাছাকাছি বেসিন, এর পরে কমোড আর শেষপ্রান্তে গোসলের ব্যবস্থা রাখা যায় সহজেই। বড় আকারের জানালাসহ প্রাকৃতিক আলোবাতাসের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়। দরজা থেকে গোসলের স্থান দূরে হওয়ায় পুরো বাথরুম ভেজার সম্ভাবনা কম থকে, পিছলে পড়ার আশঙ্কা তাই কিছুটা হলেও কমে। দরজা-জানালা খোলা রাখলে বাথরুম শুকাবে দ্রুত, মেঝে পিচ্ছিল হবার আগেই। তা’ছাড়া গোসলের জায়গাটার কর্নার যদি একটু উঁচু করা যায়, আর প্লাস্টিকের একটা পর্দা দেওয়া থাকে তাহলে এই ঝামেলাটা হয় না, ঐ নিদির্ষ্ট এরিয়াটুকুই ভিজলো তাহলে কেবল।

১ জুন ২০১১, চতুর্মাত্রিক

শব্দপুঞ্জ

কখনো স্ফুলিঙ্গ, কখনো বরফকুচি ...

মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস এর কালির আঁচড়

জড়ো হ‌ওয়া শব্দের অভয়াশ্রম

অগ্নিপথ

সত্য সমাদ্ধৃত, মিথ্যা অপসৃত

গোধূলি লগনে

রাঙ্গিয়া উঠিলে তুমি কাহারে দেখিয়া

আলাউল হক সৌরভ'এর ব্লগ

একজন সৌরভ, তেমন কেউ না, অতি সাধারণদের মাঝে শুধুই একজন অসাধারণ...

ভোরের ব্লগ-বাঁধনের মুক্তআকাশ

সারা দিনের খোলা বাতায়ন...

কঙ্কণের রিনিঝিনি

হাসি খুশী আনন্দ অমলিন স্নেহ সাথী হোক সকলের সকল সময়

সুরঞ্জনার ব্লগ

সুরঞ্জনার ব্লগ

রুমান'স ব্লগ

যেখানে পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সম বিস্তৃত

ঝলক

নাজমুল হুদার ব্লগ নানাবিধ বিষয়ে এই ব্লগ সমৃদ্ধ। এর মাঝে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপরে জোর দেওয়া হবে।

মঙ্গলধ্বনি

প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের পক্ষে

নৈঃশাব্দিক

নিঃশব্দ বাস্তব

সাপ্তাহিক ব্যবচ্ছেদ

সংবাদ ও বিশ্লষণ

লুব্ধক

ইচ্ছেপূরণের খড়কুটো কুড়াতে এসো শিল্প বিনির্মাণে অনন্য হই সৃষ্টিসুখের পরিশুদ্ধ উল্লাসে.......

অর্ণব আর্কের খেরোখাতা

ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব আর রাজনীতি

অগ্নিপথ

সত্য সমাদ্ধৃত, মিথ্যা অপসৃত

পথহারা পথিক

আঁধারের পথে হেঁটে চলা এক পথিক। আলোর খোঁজে ছুটছি নিরুদ্দেশ......