বর্ষার ঝরঝর সারাদিন ঝরছে

কবিতা মুখস্ত করা আর তার প্রথম আট, বারো বা ষোল লাইন পরীক্ষার খাতায় লেখা স্কুলের নিচের দিকের ক্লাসে বাধ্যতামূলক ছিল। বেশিরভাগ কবিতাই মুখস্ত করতে হতো স্যারদের মারের হাত থেকে বাঁচবার জন্য বা পরীক্ষায় নম্বর পাবার জন্য। তবে কিছু কবিতা মুখস্ত করে বা করতে আনন্দে ডগমগ হবার ব্যাপারও থাকতো। তেমনই একটা কবিতাঃ
বর্ষার ঝরঝর সারাদিন ঝরছে,
মাঠ ঘাট থৈ থৈ খালবিল ভরছে।
ভেজা কাক দাড়ে বসে সারাদিন ভিজছে
গিনগিনে কেঁচোগুলো ঘিনঘিন করছে।
গুরু গুরু ডাকে দেয়া
ফুটেছে কদম কেয়া।
ইত্যাদি।।
আমাদের সময়ের বর্ষাকালের সাথে এত মিল পেয়ে এ ধরনের কবিতা মনের গভীরে জায়গা করে নিত। যদিও সবটুকু মনে নেই, তবু কবিতার রেশটুকু এখনও মনের মাঝে রিনঝিন করে বাজে, বর্ষা এলেই বেজে ওঠে টুংটাং করে!
আজ আষাঢ় মাসের ২৫ তারিখ। গতরাতে অনেক বৃষ্টি হয়েছে, সারাদিনে আর একফোটাও না। আজকেই এই ২৫ দিনের মধ্যে প্রথম একটা দিন, যে দিনে একটুও বৃষ্টির ফোটা পড়েনি। আকাশে ঘন কালো মেঘ ছিল না, গাঢ় নীল আকাশে ছেড়াছেড়া সাদা মেঘ মাঝে মধ্যে সূর্যটাকে আড়াল করবার চেষ্টা করে বারবার ব্যার্থ হয়ে ফিরে গেছে।

নীচু মাঠে জমে যাওয়া পানি আষাঢ় মাসে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। ঝমঝম করে বৃষ্টি ঝরছে, সারামাঠ কাদায় কাদায় কাদাময় আর তারই মধ্যে ফুটবল নিয়ে নেমে পড়ার যে আনন্দ তা আর কোন কিছুতে পাওয়া যায় বলে মনে হয় না। উপর থেকে ঝরছে হিমশীতল জলের ধারা, পা তলিয়ে যাচ্ছে গভীর কাদায়, আঠালো সে কাদায় আটকে যাচ্ছে তিন নম্বর ফুটবল – খেলার বিরতি নেই, বিরতি নেই আনন্দ উপভোগের!

মুষলধারে নামা বৃষ্টির চাপ এসেছে কমে, শুরু হয়েছে ইলশেগুড়ি। মাঠের পাশের আরও একটু নিচু জায়গায় পানি জমে পুকুরে রূপ নিতে চলেছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নিজেদের মনকে হারিয়ে ফেলে সেই পুকুরে, তারা লাফিয়ে পড়তে চায়, তারা প্রকৃতির কাছ থেকে লুটে নিতে চায় আনন্দ। বাবা-মায়ের বকুনীর ভয় যায় পালিয়ে, এই কাদা পানিতে ডুবসাঁতার দিলে অসুখ-বিসুখ হতে পারে সে আশঙ্কা তাদের দমাতে পারে না। তারা লাফিয়ে পড়ে অক্লেশে, অনায়াসে।

সেই ডোবার ধারে অযত্নে অবহেলায় জন্মানো কচুবন। কচুশাকের প্রচুর চাহিদায় প্রায়ই থাকে পাতাশূন্য। এই বর্ষায় তারও নতুন পাতা গজিয়েছে, শাক কুড়ানীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে পাতা ছিড়তে না-আসতে পারায় কচুপাতা ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠেছে। সেই পাতার উপরে একফোটা বৃষ্টির পানি টলমল করছে, একটু বাতাসেই যা পড়ে যেতে পারে। মুক্তার সৌন্দর্যমণ্ডিত এই একফোটা পানি তবু পড়ে না, মানুষের জীবনের মতই ‘এই যাই এই যাই’ করেও কি সুন্দর ক্ষণিক উঠা সূর্যকিরণে ঝলমল করতে থাকে।

কোন কোন সময় আষাঢ়ের বৃষ্টি হয়ে ওঠে ছাগল তাড়ানো বৃষ্টি। কী সুন্দর ঝলমলে রোদ, হঠাৎ কোত্থেকে আকাশ কালো করে ধেয়ে আসে মেঘ, ঝমঝম করে বৃষ্টি হয়ে ঝরতে শুরু করে দেয়। ক’দিন একটানা বৃষ্টিতে আটকা পড়ে থাকা ছাগলের পাল রোদ দেখে বাইরে আসে খাদ্যের সন্ধানে, হঠাৎ বৃষ্টিতে তারা দিশাহারা হয়ে ম্যা ম্যা করে ডাকতে ডাকতে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটতে থাকে। আর বৃষ্টিবিরতি যদি হয় দীর্ঘ সময়ের, তা’হলে পেট ভরে খেয়ে রাস্তার পাশে কোনকিছুর সাথে ঠেস দিয়ে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে ঝিমুতে থাকে, জাবর কাটে – কখনো চোখ বন্ধ করে আয়েশের সাথে। বাচ্চারাও মায়ের আদরে যেন একেবারে গলে পড়ে আহ্লাদিত হয়ে!

৯ জুলাই ২০১১ চতুর্মাত্রিক ব্লগে প্রকাশিত ।

About নাজমুল হুদা

আমার যত লেখা শুধুই লেখার জন্য! এতে না আছে আত্মতুষ্টি, না আছে কারো মনোরঞ্জনের সম্ভাবনা!! আমার এ সব আবর্জনা ঘেটে কেউ শিক্ষণীয় কিছু পাবে কিনা তা নিয়ে আমার নিজেরই আছে প্রবল সন্দেহ। তবু লিখি, লিখে যাই মনের খেয়ালে। কেউ যদি পড়ে একটুও আনন্দ পায়, তা হবে আমার পরম পাওয়া।

1 responses to “বর্ষার ঝরঝর সারাদিন ঝরছে”

  1. Samir Roy Chowdhury. says :

    Many many thanks to blogger. I have been forgotten.

আপনার মতামত দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

শব্দপুঞ্জ

কখনো স্ফুলিঙ্গ, কখনো বরফকুচি ...

মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস এর কালির আঁচড়

জড়ো হ‌ওয়া শব্দের অভয়াশ্রম

অগ্নিপথ

সত্য সমাদ্ধৃত, মিথ্যা অপসৃত

গোধূলি লগনে

রাঙ্গিয়া উঠিলে তুমি কাহারে দেখিয়া

আলাউল হক সৌরভ'এর ব্লগ

একজন সৌরভ, তেমন কেউ না, অতি সাধারণদের মাঝে শুধুই একজন অসাধারণ...

ভোরের ব্লগ-বাঁধনের মুক্তআকাশ

সারা দিনের খোলা বাতায়ন...

কঙ্কণের রিনিঝিনি

হাসি খুশী আনন্দ অমলিন স্নেহ সাথী হোক সকলের সকল সময়

সুরঞ্জনার ব্লগ

সুরঞ্জনার ব্লগ

রুমান'স ব্লগ

যেখানে পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সম বিস্তৃত

ঝলক

নাজমুল হুদার ব্লগ নানাবিধ বিষয়ে এই ব্লগ সমৃদ্ধ। এর মাঝে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপরে জোর দেওয়া হবে।

মঙ্গলধ্বনি

প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের পক্ষে

নৈঃশাব্দিক

নিঃশব্দ বাস্তব

সাপ্তাহিক ব্যবচ্ছেদ

সংবাদ ও বিশ্লষণ

লুব্ধক

ইচ্ছেপূরণের খড়কুটো কুড়াতে এসো শিল্প বিনির্মাণে অনন্য হই সৃষ্টিসুখের পরিশুদ্ধ উল্লাসে.......

অর্ণব আর্কের খেরোখাতা

ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব আর রাজনীতি

অগ্নিপথ

সত্য সমাদ্ধৃত, মিথ্যা অপসৃত

পথহারা পথিক

আঁধারের পথে হেঁটে চলা এক পথিক। আলোর খোঁজে ছুটছি নিরুদ্দেশ......