শেষ পর্যন্ত যেতেই হলো। নানান বাধা-বিপত্তি, শারীরিক অসুবিধা সব উপেক্ষা করে ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রেলগাড়ীতে চেপে বসলাম। উহু, একটু ভুল হলো, রেলে উঠার আগে স্টেশনে ঘন্টা খানেকের বেশী সময় বসে থাকতে হলো। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন পৌঁছাতে দেরী করায় আমাদের কিছুটা ভোগান্তি হলো আর কী। রেলগাড়িসহ কোন গাড়ীইবা (প্রকারান্তরে কোন কাজ) সময় মত চলে আমাদের দেশে?
রেললাইনের দু’পাশের ফসলি জমি, সবুজ গাছপালা দেখতে দেখতে বারবার মনে হচ্ছিল ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।’ সবুজ আর সবুজ- চোখ জুড়িয়ে যায়। সময় যে কখন কোনদিক দিয়ে ফুরিয়ে গেল তা বুঝতেই পারলাম না।
যা’হোক ঘন্টা চারেকের ভিতরেই উদ্দিষ্ট স্টেশনে যেয়ে নামলাম।
দশ/বারো কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এক গ্রামে রয়েছে শিকড়ের সন্ধান। বাসের জন্য অপেক্ষা না করে একটা ‘সিএনজি’ (যদিও ডিজেল চালিত, তবু বাহ্যিক মিলের কারণে স্থানীয় নাম তার সিএনজি) নিয়ে রওনা হলাম। ৩০-৩৫ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম একেবারে বাড়ীর দরজায়। হুস করে একটা দম বেরিয়ে গেল অজান্তেই, শহরের ধুলিবালিধুয়া বের হয়ে গেল যেন বুক থেকে। আমাদের গ্রাম বাংলাদেশের আর দশটা গ্রামের মত নয়, অনেকটাই শহর ঘেষা এর অবয়ব ও পরিবেশ। তবু তো সেটা গ্রামই, অন্ততঃ সাধারণ মানুষের অকৃত্রিম আন্তরিকতা সে সাক্ষ্যই দেয়।সন্ধ্যার পরপরই জানা গেল যে পরের দিনেই ঈদ। শুরু হয়ে গেল শেষ প্রস্তুতি। ঈদগাহ ময়দান শেষবারের মত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা হলো।
মানুষ যে সংখ্যায় কত বেড়েছে তা কিছুটা টের পাওয়া গেল ঈদের মাঠে। আগে কখনও আমাদের ঈদ্গাহ ময়দানে এত নামাজীর ভিড় দেখা যেত না।
ঈদের জামাতের একাংশ
ঈদগাহের সাথেই গ্রামের গোরস্থান। গ্রামের সকলেরই কেউ না কেউ আছেনই এখানে। কাজেই কেউই ঈদের নামাজ শেষ করেই বাড়ির দিকে ছুটে যেতে পারে না। কিছুক্ষণের জন্য হলেও অজানা দেশে পাড়ি জমানো সেই আত্মীয় বা প্রতিবেশীর মঙ্গল কামনায় তাদের পাশে যেয়ে দাঁড়ায়।
কে আর এই মুখকালো হনুমানকে আদর করে সেমাই-জরদা-ফিরনী খাওয়াবে? তাই সে নিজেই নিজের ব্যবস্থা করে নিয়েছিল ঈদের দিন সকালেই। ঈদগাহে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি – তেমনই এক সময়ে এই হনুমান কোত্থেকে বড় এক কাঁঠাল নিয়ে এসে বসলো আমাদের বাড়ির প্রাচীরের উপর। সেখানটাকে নিরাপদ না-ভাবতে পারায় উঁচু এক গাছের ডালে যেয়ে কাঁঠালটা দুই ডালের ফাঁকে রেখে পেট ভরে খেয়ে বাকীটা তুচ্ছ করে ফেলে রেখে সেই যে গেল, আর সেদিকে ফিরেও তাকায়নি।
আমার এক খালাতো বোনের নাতনীর সাথে আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। সেই বাড়ীতে দুপুরে খাওয়ার দাওয়াত। জুম্মার নামাজের আগেই যেয়ে পৌঁছালাম। সেই বাড়ী সংলগ্ন এই মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করলাম।
এ বাড়ির সেই বিখ্যাত ইঁদারা এখনও আছে, অব্যাবহৃত হলেও ঐতিহ্য ধারণ করে টিকে আছে এখনও।
ধান সংরক্ষণের জন্য আছে ঐতিহ্যবাহী গোলা।
প্রাচীনের সাথে সহাবস্থান করছে এ যুগের ফুল। চমৎকার নাম না-জানা এই ফুল দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।
এই নদীর একেবারে গা ঘেষে আমাদের গ্রাম। নদী পার হয়ে যেতে-আসতে হয়। না, এখন আর ফেরী পারাপার নয়, একটা বেইলী ব্রীজ পারাপারের সমস্যা দূর করেছে। এই নদী পেরিয়ে তিনদিন মাটির কাছাকাছি কাটিয়ে আবার এই নদী পার হয়েই চলে আসতে হলো।
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ